ইল্যান্স-ওডেস্ক (www.elance-odesk.com) হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অনলাইন কাজের মার্কেট প্লেস, যেখানে মানুষ বিভিন্নভাবে তাদের সেবা প্রদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কাজের বাজারে প্রবেশ করতে পারে। এই মার্কেট প্লেস পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান ইল্যান্স-ওডেস্ক এর বাংলাদেশের কার্যক্রম পরিচালনা করছি আমি সাইদুর মামুন খান।
ফ্রিল্যান্সিং শব্দটি এখন দেশে বহুল পরিচিত হলেও অনেকের কাছে কিছুটা কৌতূহল এবং অজানা একটি বিষয়। কাজটি কি শুধু আইটির? শুধু কি তরুণ প্রজন্মের জন্যই সুযোগ এখানে? এরকম অনেক প্রশ্ন আমরা প্রায়ই পেয়ে থাকি।
ফ্রিল্যান্সিং কী
ফ্রিল্যান্সিং নিজে কোনো কাজ নয়, কাজ করার একটি ধরন মাত্র। বিভিন্ন এলাকায় চেম্বারে বসা ডাক্তার যেভাবে নিজের মতো করে ক্যারিয়ার পরিচালনা করেন, একজন উকিল যেভাবে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন, একজন সিনেমার অভিনেতা যেভাবে নিজের সময় এবং পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে কাজ হাতে নেন, একইভাবে যেকোনো পেশায় একজন যখন নিজের মতো করে ক্যারিয়ার পরিচালনা করেন, সেটাই হলো ফ্রিল্যান্সিং। সেটা হতে পারে ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি, ফ্রিল্যান্স ওয়েব ডিজাইনিং, ফ্রিল্যান্স রাইটিং বা ফ্রিল্যান্স মার্কেটিংয়ের কাজ।
কেন ফ্রিল্যান্সিং?
খুবই সহজেই বলা যায় তাদের জন্যই যারা মুক্তভাবে নিজের পেশার চর্চা চালিয়ে যেতে চান, যারা চাকরির বন্ধকতায় না গিয়ে নিজের মতো কাজ করতে চান। তবে যে চাকরি বাদ দিয়েই করতে হবে, তা নয়। আমাদের মার্কেট প্লেস ইল্যান্স ডটকম ও ওডেস্ক ডটকমে আমরা প্রায়ই দেখি অনেক ফ্রিল্যান্সার যারা পূর্ণকালীন চাকরি করছেন এবং সন্ধ্যায় প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা কাজ করে ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার চালাচ্ছেন।
কাদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং
আপনি ছাত্রজীবনে আছেন, কিছু কাজের অভিজ্ঞতা এবং উপার্জন করতে চাচ্ছেন, ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ কাজের পন্থা। আপনি শিতি গৃহিণী, পরিবারে সময় দেয়ার পাশাপাশি কিছু করতে চাচ্ছেন, ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে তার উত্তর। আপনি একজন পুরোদস্তুর পেশাজীবী, চাচ্ছেন দৈনন্দিন কাজের পাশে নিজের একটি স্বাধীন কাজের পথ তৈরি করতে, ফ্রিল্যান্স কাজ করেই শুরু করে দিতে পারেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কনসালটেন্ট হিসেবে একটি ক্যারিয়ার। এরকম কাজ করছে এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে এখন কম নয়। শুধু ইল্যান্স-ওডেস্কেই আছে প্রায় চার লাখ নিবন্ধিত বাংলাদেশী। সবাই হয়তো কাজ করছেন না, কেউ শুরু করে দিয়েছেন বা কেউ চেষ্টা করছেন শুরু করার, কিন্তু তার পরেও ইল্যান্স-ওডেস্কে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা গত বছর আয় করেছেন ২১ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৬০ কোটি টাকা) এবং বিভিন্ন কাজে তাদের প্রতি ঘণ্টা গড় আয় হচ্ছে প্রায় ৫-১৫ ডলার পর্যন্ত।
বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক কাজের বাজার এখন ৪২০ বিলিয়ন ডলারের এবং এর মধ্যে অনলাইন চাকরির বাজার প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে ২০১৪ সালে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলারের কাজ শুধু ইল্যান্স-ওডেস্কেই করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যারা দ হয়ে এখনই প্রস্তুত হচ্ছেন, তাদের সামনে আছে অসীম সম্ভাবনার হাতছানি।
দক্ষ পেশাজীবী তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হবে
আমাদের ছেলেমেয়ে বড় করছি সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য, হয় মেডিক্যাল-ইঞ্জিনিয়ারিং করার জন্য অথবা ব্যাংক বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার জন্য। যেখানে সব পর্যায়ে বলা হচ্ছে আইটি সেক্টর দিয়েই তৈরি হবে দেশের ভবিষ্যৎ, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, এমনকি পরিবারের কাছ থেকেও আইসিটি ক্যারিয়ার নিয়ে উৎসাহ প্রদানের অভাব আসলে হতাশাই সৃষ্টি করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ পড়ানো হয়, অনেক কেসস্টাডি নিয়ে গবেষণা করতে বলা হয়, সেই সময়টিতে তার পাশাপাশি যদি দেশীয় আইটি সেক্টর নিয়েও কিছুটা পড়াশোনা করতে বলা হতো, আন্তর্জাতিক বাজার নিয়েও ঘেঁটে দেখতে বলা হতো, আমার ধারণা আমাদের তরুণ প্রজন্ম আরো বড় পরিসরে চিন্তা করতে শিখত। এই সেক্টরে প্রবেশ করার জন্য আদর্শ একটি পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফ্রিল্যান্সিং। অনেকেই খণ্ডকালীন চাকরি করছে, অনেকেই করছে টিউশনি। কিন্তু তাদের যদি ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ারে যুক্ত করা যেত, তাহলে অনেকেই গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে আরো অনেক ভালো উপার্জন করতে পারত এবং ছাত্রজীবন শেষ করার আগেই আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করার অভিজ্ঞতা পেয়ে যেত। হয়তো এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কেউ নিজের উদ্যোগে নিজের প্রতিষ্ঠান চালু করত, কেউ হয়তো প্রতিষ্ঠিত কোনো স্থানে যুক্ত হয়ে বাইরের বাজার থেকে পাওয়া জ্ঞান দেশের বাজারে কাজে লাগাত এবং সেটা যে শুধু আইটিতেই হতে হবে, তা নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, স্কুলে থাকতেই অনেকে অ্যাকাউন্টিং শিখছে, তাদের যদি কুইকবুক্স সফটওয়্যার শেখানো যেত, তাহলে অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে ইল্যান্স-ওডেস্কে কাজ করতে পারত। দেশে দেখা যায় ব্যবসায় নিয়ে পড়াশোনা করেছে এমন প্রচুর তরুণ বেকার বসে আছে, অথচ তারা কিন্তু ফ্রিল্যান্স অ্যাকাউন্ট্যান্ট, মার্কেটিং কনসালটেন্ট, বিজনেস প্ল্যানার হিসেবে দারুণ ক্যারিয়ার করতে পারে। একইভাবে ক্যারিয়ার হতে পারে তাদেরও যারা পড়াশোনা করছেন আর্কিটেকচার, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন ইত্যাদি নিয়ে। এসব দতার কাজের জন্য আমরা দেখি প্রচুর কাজ পোস্ট হচ্ছে ইল্যান্স ডটকম ও ওডেস্ক ডটকমে।
পরিশেষে বলতে পারি, একসময় যে ধারণা ছিল ভালো ক্যারিয়ারের জন্য ঢাকায় আসতে হবে, এখন অনেক ছেলেমেয়ে নিজের জেলায় বসেই আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করে দেশে নিয়ে আসছেন বৈদেশিক মুদ্রা। প্রচুর দ পেশাজীবী তৈরি করতে হবে, তাদের হাতে দিতে হবে প্রযুক্তির ছোঁয়া। তাদের জানাতে হতে অপার সম্ভাবনার কথা। তৈরি করতে হবে অনুকূল পরিবেশ। ভবিষ্যৎ তো আসলে আমাদেরই হাতেই।
লিখেছেন:
সাইদুর মামুন খান
সুত্রঃ নয়া দিগন্তের সৌজন্যে
মন্তব্য করুন