আপনি কি একজন রিয়েল ফেসবুকার?
দৈনিক ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা না মারলে আপনার চলেই না। তাইতো? তা দিনে কত ঘণ্টা সময় আপনি ফেসবুকের পেছনে খরচ করছেন একটু বলুন তো? কোন হিসাব আছে কি আপনার কাছে? ধরি, প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা সময় আপনি ফেসবুকে কাটান। এটা একটা এভারেজ হিসেবে ধরে নিচ্ছি। কিন্তু যারা ফেসবুকে আসক্ত তারা এমনকি দিনের ১০ ঘণ্টার বেশি সময় ফেসবুকে খরচ করছে। তাহলে এক মাসে মানে ৩০ দিনে আপনি মোট ৩০* ৪ = ১২০ ঘণ্টা ফেসবুকে দিচ্ছেন। এবার যদি বলি বছরে কত? এই ফিগারটা দেখলে নিশ্চয়ই আপনি একটা ধাক্কা খাবেন- আপনি এক বছরে ১৪৪০ ঘণ্টা সময় দিচ্ছেন এমন এক কাজে সেটা অর্থহীন। এক বছরে আপনার জীবন থেকে হারিয়েছেন ১৪৪০ ঘণ্টা এমনি এমনি। আর হিসাবের দিকে না যাই।
সাম্প্রতিক আমি সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব এবং ক্ষতিকর দিক নিয়ে একটা Bangla online portal এ একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম। অবাক হলাম কিছু বিষয় জানতে পেরে। সেই তাগিদ থেকে এই লেখাটা লিখতে বসলাম।
ফেসবুক আপনার কি কি ক্ষতি করছে একবার দেখে নেই।
১. হতাশা বাড়িয়ে দিচ্ছি।
২. জীবন থেকে আপনার মূল্যবান সময় কেড়ে নিচ্ছে।
৩. আপনার পড়াশুনা বা কাজের ক্ষতি করছে।
৪. অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে আপনাকে প্রভাবিত করছে।
৫. কাছের মানুষের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করছে।
তালিকা করতে গেলে আরও হাজারটা সমস্যা চলে আসবে। তাতে লেখা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। শুধু এটুকু জেনে রাখুন যত দ্রুত আপনি এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাবেন ততই আপনার জন্য মঙ্গল।
কিন্তু কীভাবে এর থেকে মুক্ত হবেন। ফেসবুক তো আপনাকে মাদকের মতো আসক্ত করে ফেলেছে।
না, আপনার যদি স্বদিচ্ছা থাকে অবশ্যই আপনি এর থেকে মুক্তি পাবেন। নিচে কিছু সহজ উপায় বলে দিচ্ছি-
১. নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কেন সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত
আপনি যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত এবং এটা আপনার জন্য বেশ বড় ক্ষতির কারণ- এই বিশ্বাসটুকু সবার আগে মনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। আপনি যতক্ষণ না একে সমস্যা মনে করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেন না। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হোন যে আপনি আর ফেসবুক ব্যবহার করবেন না অথবা করলেও দৈনিক সরবোচ্চ ১ ঘণ্টা ব্যবহার করবেন।
২. একটা শখে আবদ্ধ হোন
নিশ্চয়ই এমন কিছু আছে যে কাজটা করতে আপনি খুব পছন্দ করেন। আপনার প্রিয় শখটি খুঁজে বের করুন। ফেসবুকের পেছনে প্রতিদিন যে সময়টুকু দিতেন, সেখান থেকে কিছু সময় নিজের শখের পেছনে দিন। যেমন গিটার বাজাতে পছন্দ করলে প্রতিদিন ১ ঘণ্টা গিটারে সময় দিন। এতে আপনি যেমন আনন্দ পাবেন, তেমনি শখের সে বিষয়ে আগের চেয়ে দক্ষ হয়ে উঠবেন।
৩. পছন্দের মানুষগুলোর সাথে আরও বেশি যুক্ত হোন
যেহেতু আপনি ফেসবুকে সময় দিচ্ছেন না, তাই আপনার হাতে এখন অনেক সময়। প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সময় দিন। তাদের সাথে নিজের অনুভূতি শেয়ার করুন। এতে সম্পর্ক মজবুদ হবে। আপনিও ভাল এবং সুস্থ থাকবেন।
৪. টু ডু লিস্ট
প্রতিদিন কি কি কাজ করবেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তার একটা তালিকা তৈরি করে নিন। সেই অনুয়ায়ি ১টি ১টি করে কাজ করুন। একেকটা কাজ শেষ করে লিস্ট থেকে সেটা কেটে ফেলুন। দেখবেন ভীষণ আনন্দ লাগবে- কারণ আপনি আপনি সময়কে কাজে লাগাচ্ছেন। যার একটা আউটপুট আপনি নিজের চোখে দেখতে পারছেন।
৫. সময়ের হিসাব
আগের পয়েন্টে এই বিষয়ে অলরেডি বলা হয়ে গেছে। তারপরও একটু বলছি- কাজ, বিনোদন, ঘুমানো, খেলাধুলা ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা করে সময় বরাদ্দ করুন। দিনের প্রতিটি ঘন্টার হিসাব রাখুন। কীভাবে আপনার সময় খরচ করছেন তা নিয়ে প্রতিদিন একবার করে নিজেকে নিজে রিভিউ দিন। আগের দিনের সাথে পরের দিনের তুলনা করে দেখুন।
পরিশেষে এটাই বলতে চাই- জীবনে সময়ের গুরুত্ব কতটা তা টের পাওয়া যায় শুধুমাত্র সময় ফুরিয়ে গেলে। তাই একটা সময় যেন নিজের কাজের জন্য, সময়ের অপচয়ের জন্য অনুতপ্ত হতে না হয় সেজন্য আজই কাজ শুরু করে দিন। ফেসবুকের জন্য সময়, আর নয়। ফেসবুকের আসক্তিকে না বলুন।
মন্তব্য করুন