যারা ঘুমাতে ভালবাসে, তাদের ঘুমকাতুরে, কুম্ভকর্ণ – কত কীই না শুনতে হয়। তা ঘুম কি খুব খারাপ কাজ? ঘুমানো মানে কি সময় নষ্ট করা? বিজ্ঞানীরা মোটেই তা মনে করছেন না।বিশ্ববিখ্যাত ‘সাইন্স’ পত্রিকায় ঘুমের উপকারিতার বিশদ বিবরণ ছাপা হয়েছে।
বলা হয়েছে, সারাদিন ধরে মানুষ যা কিছু করে বেড়ায়, তার ফলে মস্তিষ্কে আবর্জনা ভরে যায়। ঘুমানোর পর মস্তিষ্ক শান্ত হলে এসে পড়ে সাফাই-কর্মীরা। শুধু উলটো-পাল্টা চিন্তা নয়, ঘুম নাকি দূর করে নানা কঠিন রোগও। মানুষ যে সারা জীবনের প্রায় এক তৃতীয়াংশই ঘুমিয়ে কাটায়, তা মোটেই কোনো ভুল নয়।
গবেষণাগারে ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা লক্ষ্য করেছেন, প্রথমে ‘সেরিব্রাল স্পাইনাল ফ্লুইড’ মস্তিষ্কের কোষে পাম্প করা হয়।তারপর দেখলেন, কীভাবে ঘুমানোর সময় কোষের মধ্য থেকে আবর্জনা বেরিয়ে যাচ্ছে মস্তিষ্কের শিরা বেয়ে। তারপর শরীরের ‘সার্কুলেটরি’ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তা দূর হয়ে যায়। এই আবর্জনার মধ্যে রয়েছে ‘অ্যামিলয়েড বেটা’-র মতো পদার্থ, যা এক ধরনের প্রোটিন। আল্সহাইমার রোগের অন্যতম কারণ এটি।
গোটা প্রক্রিয়াটা এভাবে বর্ণনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। ঘুমানোর পর মস্তিষ্কের কোষগুলো প্রায় ৬০ শতাংশ সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে ‘সেরিব্রাল স্পাইনাল ফ্লুইড’ আরো সহজে ও দ্রুত তার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে পারে। তাছাড়া মস্তিষ্কের মধ্যে ‘গ্লিমফ্যাটিক সিস্টেম’ নামে একটি ব্যবস্থা রয়েছে। ঘুমানোর পর তার গতি প্রায় ১০ গুণ বেড়ে যায়। এই কাঠামোর মধ্যেই আবর্জনা সাফাইয়ের প্রক্রিয়া চলে।শুনতে খুব জটিল মনে হলেও খোলসা করে একটা উপমা দিয়েছেন গবেষণা প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ‘‘ধরে নিন, বাড়িতে বিশাল পার্টি চলছে। হয় আপনি অতিথিদের আপ্যায়ন করছেন। অথবা আপনি বাড়ি পরিষ্কার করছেন। দুটো কাজ একসঙ্গে করা সম্ভব নয়।”অতএব যারা ঘুমাতে ভালবাসেন, তারা এবার থেকে মাথা তুলে বলতে পারেন, ‘‘বিরক্ত করবেন না, মস্তিষ্কে সাফাইয়ের কাজ চলছে।’
মন্তব্য করুন