আসসালামু আলাইকুম
ওয়াই-ফাই কী আপনার স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ? ওয়াই-ফাই কারণে কী ক্যান্সার হতে পারে ? ওয়েল, এই ধরনের প্রশ্নে আপনি উদ্বিগ্ন হবেন না কারণ ওয়াই-ফাই আপনার স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি না। এটি একটি non-ionizing (স্থুলানুতে পরিনত হয় না) এবং low-intensity (কম তিব্রতা সম্পন্ন) -র বিকিরণ যেটা আপনার ব্রেনের কোনো ক্ষতি করে না এবং এর জন্য ক্যান্সারও হয় না। WHO (World Health Organization) একটি গবেষণা পরিচালনা করে এবং এই সিদ্ধান্ত উপনিত হয় যে, এই সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ নেই যে ’নিম্নস্তরের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ক্ষেত্র কোনো স্বাস্থ্য ঝুকির অস্তিত্ব আছে।”
রেডিও তরঙ্গ মানুষের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটা জিনিস। কেননা যোগাযোগ, জিপিএস, প্রতিদিনের গ্যাজেট, গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই রেডিও তরঙ্গ বিশেষ অবদান রয়েছে। ওয়াই-ফাই-ও একধরনের রেডিও তরঙ্গ। এটা ইথারনেট (Ethernet)-কে একটা wareless world-এ পরিণত করে। কিন্তু, সাম্প্রতিক কালে, কিছু মিডিয়া রিপোর্ট দাবি করে আসছে যে, ওয়াই-ফাই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বাবা-মা তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্যের জন্য চিন্তিত। এবং আপনিও এ ব্যাপারে চিন্তিত। কারণ তারা প্রায়ই এসব রিপোর্ট দেখছে এবং ’বিকিরণ’ এ শব্দটি শুনে তাদের মনে ভয়-ভীতি তৈরি হচ্ছে। এতে তারা বিভ্রান্ত হয়ে তাদের ছেলে মেয়েদেরকে অরো বেশি নিরাপদে রাখার জন্য ওয়াই-ফাই বন্ধ করে দিচ্ছে। কিন্তু, আপনি জানেন কী আলো, যার কারণ আমাদের পৃথিবীর একটি সবুজ গ্রহ, সেটাও একধরণের ই.এম (EM) বিকিরণ ?
বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার আগে, আমি আপনাদের বলতে চাই যে ওয়াই-ফাই স্বাস্থের কোনো ক্ষতি করে না। এখন, এ ব্যাপারে আর্গুমেন্ট করার আগে আলোচনা করি দু’ধরণে বিকিরন নিয়ে – একটা Ionizing এবং অন্যটা non-ionizing.
ionizing এবং non-ionizing বিকিরণের মধ্যে পার্থক্য। ওয়াই-ফাই non-ionizing বিকিরণ, এটা নিরাপদ
ionizing বিকিরণ হল এক ধরণের বিকিরণ যেটা মুক্ত ইলেকট্রনের যথেষ্ট শক্তি বহন করে এবং তাদেরকে আয়নিত করে। এই ধরনের বিকিরণ বিপজ্জনক এবং এটি এক্স-রে, গামা, অতি-বেগুনি রশ্মি, ইত্যাদির মত মারাত্মক রশ্মি বহন করে। আপনি যদি এই ধরনের ionizing বিকিরণের মধ্য লম্বা সময় ধরে থাকেন, তাহলে এটি আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। এই ionizing বিকিরণ বিপজ্জনক স্তর বোঝানোর জন্য চিত্রের মত হলুদ ব্যাকগ্রউন্ডে ট্রিফল চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। এটা সর্বপ্রথম ১৯৪৬ সালে আমেরিকায় ব্যবহৃত হয়। পরবর্তী সময়ে এটার আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যবহার শুরু হয়।
অপরপক্ষে, non-ionizing বিকিরণ পরমাণু অয়নিত করার যথেষ্ট শক্তি বহন করে না। এই বিকিরণ দৃশ্যমান আলোর, বেতার তরঙ্গ, এবং ইনফ্রারেড বিকিরণ বহন করে। এছাড়া, non-ionizing বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর মত। তাই এটা আলোর ন্যায় নিরাপদ। Wi-Fi নেটওয়ার্কগুলো non-ionizing বিকিরণ ব্যবহার করার কারণে, এটা নিরাপদ। যদি এটা ionizing বিকিরণ হত, তাহলে ওয়াই-ফাই রাসায়নিক বন্ধন ভেঙ্গ আমাদের শরীরের ক্ষতি করতে পারত। তাতে আমরা খুব তারাতারি-ই পটল তুলতাম (মরে যাওয়া)।
ওয়াই-ফাই -এর তীব্রতা এবং পরিসর
প্রায়ই মানুষ মাইক্রোওয়েভ বিকিরণের সাথে ওয়াই-ফাই -র তুলনা করে এবং ভাবে তারা একই শ্রেণীর অন্তর্গত। তারা তাদের আর্গুমেন্টকে সমর্থন কোরে বলে যে, মাইক্রোওয়েব খুব গরম এবং এটা আপনাকে বার্ন করতে পারে। ওয়েল, এছাড়াও একজনকে বিকিরণের তীব্রতা সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। একটা স্বাভাবিক হাউজহোল্ড মাইক্রোওয়েভ 600W ক্ষমতার শক্তির চেয়েও বেশি ক্ষমতার শক্তি উৎপন্ন করে। সে তুলনায় একটা খুব শক্তিশালী ওয়াই-ফাই রাউটার 1W এর চেয়েও কম ক্ষমতার শক্তি উৎপন্ন করে, যা কিছুই না।
এছাড়াও তীব্রতা থেকে, আপনার রৈখিক তরঙ্গ বিকিরণ (linear wave radiation) দ্বারা অনুসৃত inverse-square law সম্পর্কেও জানা উচিত। এই law এটা বর্ণনা করে যে, ”বিকিরণের তীব্রতা, উৎস এবং নির্দিষ্ট বস্তু/ব্যক্তি মধ্যবর্তী সরাসরি দূরত্বের ব্যাস্তানুপাতিক।” সুতরাং, যদি আপনি আপনার Wi-Fi রাউটারের দূরে থাকেন, তবে বিকিরণ তীব্রতা আরও বেশি হ্রাস পাবে। যদি, আপনি আপনার Wi-Fi রাউটারের খুব কাছাকাছিও চলে আসেন, তবেও বিপদ এখনো অবর্তমান।
এমনকি WHO কোন প্রমাণ পায় নি —
যদি আপনি এ ব্যাপারে আরো বেশি নিশ্চিত হতে চান, আপনি WHO (World Health Organization) -এর বিস্তারিত রিপোর্ট পড়তে পারেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে,WHO এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, “বর্তমানে নিম্নস্তরের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিকের ক্ষেত্রে কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি যেটাতে স্বাস্থ্যহানির অস্তিত্ব নিশ্চিত করে।”
“current evidence does not confirm the existence of any health consequences from exposure to low-level electromagnetic fields.”
শেষ কথা
অন্যান্য ঝুঁকি আছে যেটা আপনার সময় এবং শক্তি নষ্ট করবে – যানযট, মশা, দূষিত পানি এবং বায়ু, ধূমপান ইত্যাদি। আসুন এসব ব্যাপারে আমরা চিন্তা করি যে কিভাবে এগুলো সমাধান করা যায় ? আমি আপনাদের সাথে আছি। আমাদের এ ব্যাপারেও চিন্তা করতে হবে যে, পৃথিবীর পরিবেশ দ্রুত নেতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের জলবায়ু পরিবর্তীত হয়ে যাচ্ছে। তেমন শীত নেই, বৃষ্টি নেই শুধু গরম। পৃথবীর ইতিহাসে উষ্ণতম বছর ছিল ২০১৪, ২০১৫ সালে হল ২০১৫, আবার ২০১৬ সালে পৃথবীর ইতিহাসে উষ্ণতম হল ২০১৬। এভাবে চলতে থাকবে …। তাই আমাদের সবার এ ব্যাপারে মাথা ঘামাতে হবে।


Climate Central
২০১৬ অন্তর্ভূক্ত করা হয় নাই।
আপনার বন্ধু এবং পরিবারে যারা মনে করেন যে ওয়াই-ফাই স্বাস্থ্যের নিরাপদ না তাদের সঙ্গে এই টিউনটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।
কেমন লাগল টিউনটা ? আপনার মতামত টিউমেন্ট বাক্সে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। সবাই ভালো থাকেন। খোদা হাফেজ।
আমার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম
মন্তব্য করুন