আমেরিকার চিকিৎসকগণের দেয়া নতুন দিক নির্দেশনা অনুযায়ী – দিনের প্রধান খাবার ও স্ন্যাক্স এর পরিকল্পনা করা এবং প্রতিদিন সকালের নাস্তা করা কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের বৈজ্ঞানিক বিবৃতির মতে, দিনের প্রথমভাগে অনেক বেশি ক্যালরি গ্রহণ করলে এবং রাতে কম খাবার খেলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা হৃদপিণ্ড ঘটিত অন্য রোগ বা রক্তনালীর রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে।
নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভারসিটি মেডিকেল সেন্টারের পুষ্টি গবেষক এবং দিক নির্দেশনাটি যারা লিখেছিলেন তাদের চেয়ারম্যান মেরি পিয়ের এসটি ওঞ্জ বলেন, ‘আমরা যখন খাই তখন কী খাই সে বিষয়ে নজর দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ’।
এসটি ওঞ্জ এবং তার সহকর্মীরা সার্কুলেশন সাময়িকীতে উল্লেখ করেন যে, আমেরিকার পূর্ণ বয়স্কদের মধ্যে ৩০ শতাংশই সকালের নাস্তা বাদ দেয় নিয়মিত ভাবে, সাম্প্রতিক বছরগুলতে অনেকবেশি মানুষ তাদের ঐতিহ্যগত তিন বেলার খাবারের পরিবর্তে স্ন্যাক্স খায়, যা একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
যখন মানুষ প্রতিদিন সকালের নাস্তা খান তখন তাদের উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার মত কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ এর রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
এর কারণ খাবারের সময় শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ির উপর প্রভাব ফেলে। আমাদের শরীর দিনের বেলার মত রাতের বেলায় চিনিকে প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে না। এসটি ওঞ্জ ইমেইলের মাধ্যমে বলেন, ‘যারা শিফটিং ডিউটি করেন তাদের মধ্যে দিনের বেলায় যারা চাকরি করেন তাদের তুলনায় রাতের শিফটে যারা কাজ করেন তাদের এই সময়সূচী এবং স্থূলতা ও হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি সাথে সম্পর্ক বিদ্যমান’।
এসটি ওঞ্জ বলেন যে, জনসংখ্যা গবেষণা থেকে আমরা জানি যে, সকালের নাস্তা গ্রহণ করার সাথে ওজন কমা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের সম্পর্ক বিদ্যমান, এর পাশাপাশি কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকিও কমায়।
এসটি ওঞ্জ সতর্ক করে বলেন যে, ‘নির্দিষ্ট কারো ক্ষেত্রে যারা সকালের নাস্তা খাওয়া এড়িয়ে যান তাদের সকালের নাস্তা গ্রহণ করা বৃদ্ধি করলে তাদের এই খাবার ওজন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে কারো ক্ষেত্রে সকালের নাস্তা গ্রহণ করলে এটি অতিরিক্ত খাবার হিসেবে ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে’।
এর সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে যারা সকালের নাস্তা গ্রহণ করেন তারা সঠিক খাবার গ্রহণ করেন না অথবা এর পরে যা খান তা দিয়ে খাবারের গুনাগুণ নষ্ট হয়ে যায় বলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের পরিবর্তে ক্যালরি জমা হতে থাকে শরীরে।
দিক নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকায় ফল, সবজি, আস্ত শস্য, কম চর্বির দুগ্ধজাত পণ্য, পোল্ট্রি এবং মাছ থাকবে। ভালো খাওয়া অর্থ লাল মাংস, লবণ এবং চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরিমাণ সীমিত রাখা।
এসটি ওঞ্জ বলেন, বিভিন্ন সময়ে আপনি কী খাবেন তা যদি ঠিক করে রাখেন বিশেষ করে যারা ব্যস্ত থাকেন তারা হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী খাদ্য তালিকা তৈরি করতে পারবেন।
এসটি ওঞ্জ পরামর্শ দেন, ‘স্বাস্থ্যকর খাদ্য তৈরি করা এবং বহন করাও গুরুত্বপূর্ণ’। তিনি পরামর্শ দেন, সকালে ঘরে তৈরি স্মুদি, হোল গ্রেইন মাফিন বা সিরিয়াল বার খাওয়ার জন্য এবং স্যান্ডউইচ বা অন্য কিছু সাথে নিয়ে যেতে পারেন।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি লেঙ্গুন মেডিকেল সেন্টারের পুষ্টিবিদ সামান্থা হিলার (যিনি এই নির্দেশিকা দেয়ার সাথে জড়িত ছিলেন না) বলেন, ‘সারাদিনে কী খাবেন তা অগ্রিম চিন্তা করে রাখা সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে খাদ্য খেতে সাহায্য করে’।
আমরা সাধারণত শুনে থাকি যে, ‘সারাদিনে অল্প অল্প করে অনেকবারে খাওয়া ভালো’, বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই এটি অবাস্তব, কারণ অল্প খাবার অনেকবার খাওয়ার ফলে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই ওজন বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে বলে হিলার জানিয়েছেন ইমেইলের মাধ্যমে।
হিলার বলেন, ‘ডিনারের পরে খাওয়া ওজন বৃদ্ধির একটি ফাঁদ’। হিলার আরো বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় ক্যালরি ও সময়ের সাথে সাথে ওজন বৃদ্ধির সহজ উপায় হচ্ছে রাতের বেলায় খাওয়া, কারণ মানুষ যখন টিভি, কম্পিউটার বা ট্যাবলেটের সামনে থাকে তখন স্ন্যাক্স গ্রহণ করে’।
হিলার পরামর্শ দেন,’ রাতের খাবার খাওয়া হয়ে গেলে রান্নাঘরের দরজা বন্ধ করে দিন’। যদি আপনি রাতের খাবার সময়মত খেতে না পারেন তাহলে রাতে হালকা খাবার খান।
মন্তব্য
Its a very informative & very helpful site.
Thanks to shere with us.