আগামী ১৬ তারিখ ঈদ। এই ঈদের মূল আকর্ষণ হল, লাল মাংস বা রেড মিট। এখন আমরা সবাই জানি যে, লাল গোশত শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, এটি একটি ঢালাও তথ্য। যা হোক, আমাদের পরিমিতি জ্ঞান রেড মিটের সমূহ বিপদ এড়ানোর জন্য যথেষ্ট।
যে কারণে আপনি রেড মিট খাবেন
রেড মিটে আছে প্রচুর আয়রন। এখানে আয়রনের যে প্রকারটি পাওয়া যায় তাঁকে বলে, হিমি আয়রন। এটি আমাদের শরীরে খুব দ্রুত শোষিত হয়। আমাদের দেশের গ্রাম অঞ্চলে বিশেষ করে কিশোরী বা প্রসূতি মহিলাদের মাঝে আয়রনের অভাবে এনেমিয়া দেখা যায়। রেড মিট সহজেই এ অবস্থা থেকে উত্তরন ঘটাতে পারে।
রেড মিটের ক্ষতিকর দিক
লাল গোশত বা রেড মিট, অর্থাৎ গরু বা ছাগলের গোশতে আছে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি। এই সম্পৃক্ত চর্বি আমাদের স্থূলতা বাড়ায়, রক্তনালিতে চর্বি জমায়, হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহকে ব্যাহত করে, রক্তচাপ বাড়ায়, ডায়াবেটিস জটিল করে তোলে, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। গেঁটে বাত বা ইউরিক এসিড বেশি যাদের এবং যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে, তাদের জন্য গোশতের আমিষ ক্ষতিকর। তারা অবশ্যই চিকিৎসক কর্তৃক বরাদ্দকৃত আমিষের চেয়ে বেশি পরিমাণে আমিষ খাবেন না। তাতে বিপদ হতে পারে।
তাহলে এই ঈদে আপনি কি করবেন
আপনি অপরিমিত অবশ্যই খাবেন না। বাচ্চা এবং টিন এজাররা তারা অবশ্যই ঈদে মাংস খাবে। এবং তাদের জন্য তেমন কোন বিধিনিষেধ নেই। তবে বিশেষ করে যারা স্থূলতা, ডায়াবেটিস, রক্তচাপ বা হৃদরাগে ভুগছেন, তারা বিশেষভাবে সাবধান থাকবেন। মনে রাখবেন, কোনো অবস্থায়ই দৈনিক খাদ্যতালিকায় চর্বিজাতীয় খাদ্য যেন ৩০ শতাংশের বেশি না হয়। আর এর মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকবে মাত্র ৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক ৭০ গ্রাম, সপ্তাহে ৫০০ গ্রাম লাল মাংস খাওয়া ক্ষতিকর নয়।
খেয়াল রাখতে হবে রান্নায়
যে চর্বি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় শক্ত বা জমাট থাকে, সেটিই স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি। লাল গোশত ছাড়াও ঘি, মাখন, মার্জারিন, ক্রিম প্রভৃতিতে আছে এই সম্পৃক্ত চর্বি। তাই রান্নার সময় খেয়াল রাখতে হবে ২ টি বিষয়। এক. মাংসের গায়ে যে সাদা চর্বি লেগে থাকে, তা ফেলে দিতে হবে। দুই. রান্নায় ঘি, মাখন বা ডালডা যথাসম্ভব কম ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া, গ্রিল, সেদ্ধ বা খুবই সামান্য তেলে স্টু করা গোশত দেহের জন্য কম ক্ষতি বয়ে আনে।
ঈদে ফাস্ট-ফুড বর্জন করুন
বেকারি ও রেস্তোরাঁ ওয়ালারা ভেজিটেবল ফ্যাট জমাট করার মাধ্যমে ট্রান্স ফ্যাট উৎপন্ন করে। এটি রক্তের এলডিএল বাড়ায়। তাই দেহের দ্বিগুণ ক্ষতি এড়াতে ফাস্ট ফুড থেকে দূরে থাকুন।
হরমোন নিয়ে বিতর্ক
গরুর মাংস এবং দুধ উৎপাদন বাড়াতে হরমোন ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত ব্যবহার করা হয়, সিনথেটিক ইস্ট্রোজেন, টেসটসটেরন। ইস্ট্রোজেন হরমোন ডাই-ইথাইলএস্টিবেল নামে একটি যৌগ গঠন করে। গবেষণায় দেখা যায়, এটি ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
১৯৯৩ সালে এফডিএ অনুমতি দেবার পর থেকে বোভাইন সমাটোট্রপিন অথবা রিকম্বিনেন্ট বোভাইন গ্রোথ হরমোন যদিও আমেরিকার ডেইরী ফার্মগুলোতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা এবং অন্যান্য অনেক দেশে এটি এখনও অনুমতি পায়নি।
ফার্মগুলোর পক্ষের গবেষকরা বলেন যে, প্রাণী দেহে যে হরমোন দেয়া হয়, তার প্রভাব মানব শরীরে পড়ে না।
তবে অনেকেই বলেন, স্টেরয়েডের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে গরু জবাই করা বা গরুর মাংস খাওয়া ঠিক নয়। এসব হরমোন এতটাই মারাত্মক যে, মাংস রান্না করার পরও তা নষ্ট হয় না। ফলে, স্টেরয়েড মানুষের শরীরে গিয়ে কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঙ্গের বিভিন্ন প্রকার রোগের সৃষ্টি করে।
অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব, মেয়েদের অল্প বয়সে পরিপক্কতা এবং শিশুদের অল্প বয়সে মুটিয়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ, এসব স্টেরয়েড হরমোন।
সতর্ক হতে হবে আমাদের
এ ধরনের গরু দেখলেই চেনা যায়। প্রাকৃতিকভাবে শক্তি সামর্থের কোনো গরু হয় তেজি। কিন্তু এই হরমোন দেয়া গরুগুলো ধীর ও শান্ত হয়ে থাকে। শরীরে ও আচরণে কোনো তেজী ভাবই দেখা যায় না।
প্রানীবিদদের মতে, স্টেরয়েড প্রাণীর শরীরে তরল জাতীয় পদার্থ বাড়িয়ে দেয়। এতে গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া অতিরিক্ত ভিটামিন দেওয়া হলে তা গরুগুলোকে অসুস্থ করে ফেলে। এবং অতিরিক্ত ইউরিয়া বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ফলে, এগুলো প্রাকৃতিকভাবে বেঁচে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলে।
মন্তব্য করুন