আগামী তিন মাসের মধ্যে শুরু করে পরবর্তী ২২ মাসের মধ্যে শেষ হবে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের কাজ। আর এরই মধ্য দিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের জন্য চুক্তি শেষে এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ নামের কনসোর্টিয়াম এবং সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (সিএসসিসিএল) এর মধ্যে চুক্তির পর এ তথ্য জানান ডাক ও টেলিকম মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু বকর সিদ্দিক।
বিএসসিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের এই চেয়ারম্যান বলেন, কেবল বাড়তি ব্যান্ডউইথ নয়, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে দেশে ইন্টারনেট সংযোগের একটি ব্যাক-আপ লাইন তৈরি হবে। ফলে কোনো কারণে একটি সাবমেরিন ক্যাবল কাটা পড়লেও দেশ ইন্টারনেট যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। ফলে ঝুঁকিও কমবে।
সূত্র মতে, দ্বিতীয় সাবমেরিনের অধীনে সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্ট ইউরোপ কনসোর্টিয়ামের সি-মি-ইউ-৫ নামের আন্তঃদেশীয় ক্যাবল নেটওয়ার্ক স্থাপিত হবে ১৪টি কোম্পানির মালিকানায়। এদের মধ্য রয়েছে বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড, চীনের চায়না মোবাইল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, চায়না গ্লোবাল টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড, চায়না নেটওয়ার্ক কমিউনিকেশন গ্রুপ, এমিরেটস ইন্টিগ্রেটেড টেলিকমিউনিকেশনস লিমিটেড, অরেঞ্জ (ফ্রান্স টেলিকম), মায়ানমার পোস্ট অ্যান্ড টেলিকম, পিটি টেলিকমিউনিসকি ইন্দোনেশিয়া ইন্টারন্যাশনাল, সৌদি টেলিকম কোম্পানি, সিঙ্গাপুর টেলিকমিউনিকেশন্স, শ্রীলংকা টেলিকম পিএলসি, টেলিকম ইতালি স্পার্কল, টিওটি পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড এবং ইয়েমেন ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস।
নতুন এই সংযোগে যুক্ত হতেই গত শুক্রবার কুয়ালালামপুরে একটি চুক্তিতে সই করেছেন বিএসসিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে দেশ বাড়তি এক হাজার ৪০০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ পাবে। বর্তমান সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পেয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করতে পারছে দেশটি। বাকি ব্যান্ডউইথ এখনো অব্যহৃত। তারপরও ঝুঁকি কমাতে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হচ্ছে দেশ। আর এ লক্ষে সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্ট ইউরোপ কনসোর্টিয়ামের সি-মি-ইউ-৫ নামের আন্তঃদেশীয় ক্যাবল নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলো বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, সি-মি-ইউ-৫ প্রকল্পের ক্যাবলে দক্ষিণ এশিয়া,দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের ১৭ দেশ সংযুক্ত হচ্ছে। দেশগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ইতালি, আলজেরিয়া, তিউনেশিয়া, মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মায়ানমার। এই প্রকল্পের আওতায় সাগরের নিচ দিয়ে ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ অপটিক্যাল ক্যাবল স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশে ক্যাবলটি আসবে সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ও মায়ানমার হয়ে। কনসোর্টিয়াম প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার পর্যন্ত ক্যাবল পৌঁছে দেবে। সেখান থেকে বাড়তি ৩০০ কিলোমিটার ক্যাবলের মাধ্যমে এটি পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় নিয়ে যাওয়া হবে। কুয়াকাটাতেই হবে এর ল্যান্ডিং স্টেশন। ইতিমধ্যে সেখানে ১০ একর জমি কেনা হয়েছে।
মন্তব্য করুন