প্রযুক্তির জয়রথ এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।
মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও এসেছে ভিন্নতা।
গত ১৫/২০ বছর আগেও এই ডিজিটাল মার্কেটিং শব্দটি ছিল অপ্রচলিত।
কিন্তু সময়ের সাথে বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং শুধু একটি কনসেপ্টই না, এটা হয়ে উঠেছে ব্যবসা বানিজ্য ক্ষেত্রে অন্যতম অনুষঙ্গ। এর ডিজিটাল মার্কেটিংকে ঘিরে হয়ে উঠেছে এক বিশাল ইন্ডাস্ট্রি। লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং।
যে বিষয়টি চারদিকে এতো এতো আলোচনা, সেই ডিজিটাল মার্কেটিং আসলে কি? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ডিজিটাল মার্কেটিং আসলে কি?
ডিজিটাল প্লাটফর্ম যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল ইত্যাদি ব্যবহার করে যখন কোন প্রতিষ্ঠান তার পণ্যের প্রচার করে তার সম্ভাব্য কাস্টমারদের মধ্যে ঐ পণ্য নিয়ে আগ্রহ তৈরি করে তখন তাকে এককথায় ডিজিটাল মার্কেটিং বলে।
এখানে ডিজিটাল মার্কেটিংকে অনেকেই সাধারণ বা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং থেকে আলাদা করে ফেলেন। কিন্তু একজন প্রফেশনাল Digital Marketer হিসেবে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন।
ট্রেডিশনাল ও ডিজিটাল মার্কেটিং আসলে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু না। তাদের উদ্দেশ্য ও প্রকাশ একই রকম শুধু ভিন্নতা মাধ্যমে।
তার মানে মার্কেটিং এর কনসেপ্ট সেই একই আছে সেটা ডিজিটাল হোক বা ট্র্যাডিশনাল হোক, পার্থক্য হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এ ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ও ডিজিটাল ডিভাইস টার্গেট করে মার্কেটিং করা হয় আর ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এ ট্র্যাডিশনাল চ্যানেল যেমন – টিভি, রেডিও, নিউজপেপার, লিফলেট ইত্যাদি মানে সেই পুরনো এপ্রোচে মার্কেটিং করা হয়।
একটি নতুন শব্দ চলে এলো- মার্কেটিং চ্যানেল।
মার্কেটিং চ্যানেল আসলে কি?
মার্কেটিং কি? মার্কেটিং হচ্ছে এমন একটা প্রসেস যার মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান তার ম্যাসেজ বা বার্তা কাস্টমারের কাছে পৌঁছায়। এই ম্যাসেজ আপনি যে যে মাধ্যমে পৌঁছাতে পারেন, তার প্রত্যেকটি একেকটি চ্যানেল। সুতরাং যখন ফেসবুকের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান তার কাস্টমারদের সাথে কমিউনিকেশন করে তখন ফেসবুক ঐ প্রতিষ্ঠানের একটি মার্কেটিং চ্যানেল। যখন ইউটিউবের মাধ্যমে কাস্টমারদের কাছে প্রতিষ্ঠান তার ম্যাসেজ পৌঁছায় তখন ইউটিউব একটি মার্কেটিং চ্যানেল।
এখন আসা যাক পরের পার্টে-
পেশা হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং কেমন?
এই প্রশ্নে যাওয়ার আগে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক।
ডিজিটাল মার্কেটিং একটি গ্রইং ইন্ডাস্ট্রি। উন্নত দেশগুলকে যে কোন প্রতিষ্ঠান তাদের ইয়ারলি মার্কেটিং বাজেটের প্রায় ৭০ ভাগ বরাদ্দ রাখে ডিজিটাল মার্কেটিং এ। কেন?
কারণ ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে-
- খুব কম খরচ করে ট্র্যাডিশনালের তুলনায় কয়েকগুন বেশি রেজাল্ট আনা যায়।
- খুব অল্প বাজেট নিয়ে মার্কেটিং শুরু করা যায়
- সুপার টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে খুব সহজেই পৌঁছানো যায়
- রিয়েল টাইম ডাটা পাওয়া যায়
- রিয়েল টাইম ডাটা ড্রিভেন ডিসিশন নেওয়া যায়
- ইত্যাদি আরও অনেক কারণ আছে
এইসব কারণে উন্নত দেশের এখন ডিজিটাল মার্কেটিং প্রচণ্ড চাহিদাসম্পন্ন একটি ইন্ডাস্ট্রি। আর ইন্ডাস্ট্রি পরিচালনা করতে দরকার ডিজিটাল মার্কেটার। যে কারণে ডিজিটাল মার্কেটিং একটি অনেক জনপ্রিয় ও উচ্চবেতনের একটি পেশা।
এখন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আসি।
উন্নত দেশে যেটা আগে শুরু হয় সেটা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশে আসতে আসতে প্রায় ৫/১০ বছর সময় লেগে যায়।
তবে আপনি যদি ৩ বছর আগের সাথে বর্তমানের তুলনা করেন তাহলে নিজেই বুঝতে পারবেন ডিজিটাল মার্কেটিং বাংলাদেশে কি পরিমাণে গ্রো করছে।
তবে সমস্যা ও সম্ভাবনা হচ্ছে- বাংলাদেশে বর্তমানে খুব ভাল মাপের ডিজিটাল অভাব। বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে যারা নিজেরা পরিচয় দিচ্ছে তাদের বেশিরভাগই আদতে ডিজিটাল মার্কেটিং জানে না।
শুধু ফেসবুকে বুস্ট করতে জানলেই আমরা তাকে বলি ডিজিটাল মার্কেটার। এমন কি আপনি দেখবেন ফেসবুক গ্রুপে কমেন্টে বা ইউটিউবে কমেন্টে এসে যারা স্পেমিং করে তারাও নিজেদের পরিচয় দেয় প্রফেশনাল ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে। ডাটা এন্ট্রি নিয়ে যারা কাজ করে তারাও নিজেদের ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে পরিচয় দেয়।
এদের সবারই অধিকার আছে কারণ ঐ যে আগেই বলেছি বাংলাদেশে ভাল মানের ডিজিটাল মার্কেটারের খুব অভাব। কিন্তু যখন খুব বড় মাপের অনেক ডিজিটাল মার্কেটার বাংলাদেশে হয়ে উঠবে- তখন এই সব স্পেমাররা এমনি এমনি ঝড়ে পড়বে।
একজন ভাল মানের ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে সবার আগে আপনাকে জানতে হবে-
- মার্কেটিং
- আপনার থাকতে হবে ক্রিয়েটিভিটি
- আপনি হতে হবে প্রএকটিভ
- শেখার প্রতি থাকতে হবে প্রচণ্ড আগ্রহ
- প্রযুক্তির ব্যবহার জানতে হবে
আজকে এ পর্যন্তই। আগামীতে ডিজিটাল মার্কেটিং বা ব্যবসার অন্য কোন বিষয় নিয়ে চলে আসবো। সবাই ভাল থাকুন।
মন্তব্য করুন